মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী যে গণহত্যা ও নারী নির্যাতন ‘ চালিয়েছিল তার বিবরণ দাও ।। অথবা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের বর্ণনা দাও। উত্তর : ভূমিকা ও বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে যে দুটি ঘটনা আজো কোটি বাঙালির হৃদয়ে নাড়া দেয় তা হলাে। পাকবাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে গণহত্যা ও নারী নির্যাতন। ১৯৭১ সালের এই গণহত্যার বর্বরতা সারা বিশ্বে যেমন পাকিস্তানি। বাহিনীর মুখােশ উন্মােচন করতে সক্ষম হয়েছিল, তেমনি নারী নির্যাতনের ঘটনাও সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল।
পাকবাহিনী যুদ্ধের নামে সারা বাংলার শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, নারী যাকেই পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। পাশাপাশি তারা নারীদের। উপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ নারী পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে সম্ভম হারিয়েছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। * ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা : ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসক কর্তৃক সংঘটিত। গণহত্যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে তুলে ধরা হলাে : ১. ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা : পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চের গণহত্যার পরিকল্পনা করেছিল ১৮ মার্চ ১৯৭১ সালে। ঢাকা সেনানিবাসে বসে। আর এই পরিকল্পনা অনুসারে পাকবাহিনী ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে ট্যাংক, মেশিনগান, মর্টার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করার উপায়সমূহ
পাকবাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল জহরুল হক হল, জগন্নাথ হল,। ই.পি.আর.ব্যারাক, রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্রভৃতি স্থান। এসব এলাকা ছাড়াও তারা সারা ঢাকা শহরে অসংখ্য মানুষ হত্যা, ঘরবাড়ি, দোকানপাট, অফিস, পেট্রোল পাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয়। ২৫ মার্চ রাতে প্রায় এক লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করা হয়। | ২. গণহত্যার বিস্তার : পাকিস্তানি শাসকদের হত্যাযজ্ঞ শুধু যে ঢাকাতে সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়, আস্তে আস্তে এ হত্যাযজ্ঞ সারা বাংলায় ছড়িয়ে দেয়। এজন্য তারা গড়ে তােলে রাজাকার, শান্তি বাহিনী, আল-শামস নামক কুখ্যাত বাহিনী। এই বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লােকদের ধরে নিয়ে এসে পাকবাহিনীর হাতে দিত। পাকবাহিনী এসব লােকদের নির্যাতন করে একসাথে মেরে ফেলত।
অধ্যয়নরত তরুণ ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপকমণ্ডলী এবং বুদ্ধিজীবী
গণহত্যার লক্ষ্যবস্তু : পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে এগিয়ে চলছিল। গণহত্যার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিক, পুলিশ, আধা-সামরিক আনসার ও মুজাহিদ বাহিনীর লােক, হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামী নেতাকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণ ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপকমণ্ডলী এবং বুদ্ধিজীবী।। ৪. চুকনগর গণহত্যা : চুকনগর গণহত্যা ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণহত্যা যেখানে একদিনে ১০০০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এই গণহত্যা চুকনগর গণহত্যা নামে পরিচিত। এ অঞ্চলটি খুলনায় অবস্থিত। এখান দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া হতাে। ১৮-১৯ মে বিভিন্ন অঞ্চলের লােকজন একসাথে চুকনগরে জমা হয় এ উদ্দেশ্যে যে, ২০ তারিখ তারা সবাই ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। কিন্তু সকাল ১০টার দিকে পাকবাহিনী এ অঞ্চলে পৌছে নরহত্যা চালায়। মুহূর্তেই অঞ্চলটি মৃত্যু নগরীতে পরিণত হয়। এ ঘটনা পাকবাহিনীর নির্মম গণহত্যার স্বাক্ষর বহন করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যা : পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে আরাে একটি বড় ধরনের গণহত্যা। সংঘটিত করে। তারা এদেশের বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সুশীল । সমাজের সদস্যদের হত্যা করে এদেশকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। আর তারই ধারাবাহিকতায় তারা ১৪ ডিসেম্বর। বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে গণহত্যা চালায়, যা ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক বর্বরতার সাক্ষ্য দেয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী কর্তৃক নারী নির্যাতন : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলায় হাজারাে মা-বােনের উপর পাকবাহিনী যে অমানুষিক নির্যাতন চালায় তা নিম্নে আলােচনা করা হলাে :
নির্যাতিত নারীদের পরিসংখ্যান
নির্যাতিত নারীদের পরিসংখ্যান : ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী কত নারীর উপর যে নির্যাতন চালায় তার সঠিক। ইতিহাস বা তথ্য না থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এর সংখ্যা অনুমান করা যায়। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ডা, জিওকে ডেভিস এক প্রতিবেদনে বলেন, সরকারি হিসেবে প্রায় দুই লাখ ধর্ষিতা এবং দুই লাখ অন্তঃসত্ত্বা মহিলা রয়েছে। আর এক বিদেশি প্রতিবেদনে এই সংখ্যা দেখানো হয়েছিল প্রায় ১০ লাখ। তবে বাংলাদেশে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসির | মামুন এর এক গবেষণা শীর্ষক প্রতিবেদনে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
নারী নির্যাতনের কারণ : পাকিস্তানি বাহিনী একদিকে বাংলায় যেমন গণহত্যা চালাচ্ছিল, অপরপক্ষে তারা। তাদের মনােরঞ্জনের জন্য নারীদের নির্যাতন করতাে। পাকবাহিনী ছাড়াও এদেশীয় দালাল কর্তৃক নারীরা কম নির্যাতনের শিকার হয় নি। অনেক নারীর স্বামী-সন্তান যুদ্ধে গেছে এই সুযােগে পাকিস্তানি হানাদাররা এদেশীয় দালালদের সহায়তায় | অসহায় নারীদের উপর নির্যাতন ঢালাত। | ৩. নারী নির্যাতনের বীভৎস চিত্র : ১৯৭১ সালের নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। নীলিমা ইব্রাহিম। তিনি তার গ্রন্থে নারী নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন। অনেক নরপশু হােট ছােট বালিকাদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে তাদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে ফেলে রাখত। আবার অফিসাররা পর্যায়ক্রমে মহিলাদের উপর নির্যাতন চালাত।
অনেক সময় মেয়েদেরকে উলঙ্গ করে রাখা হতাে। আবার এসব মেয়ের উপর পাশবিক অত্যাচারের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন চালানাে হতাে। প্রতিদিন বিরামহীন প্রহারে মেয়েদের দেহ থেকে রক্ত ঝরত। মূলত সেই সময়কার নারীদের যে অবস্থা তা সত্যিই মানবতার নৈতিকতার শিখরকে অতিক্রম করেছে।
- জাহাজের তলদেশে মাইন স্থাপন করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরাপদ
- পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা
- দুই বাংলার মধ্যে যে ধরণের সম্পর্ক অটুট ছিলো
- নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করার উপায়সমূহ
- জরুরি চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি ব্যবহার