পাকবাহিনীর লালসার শিকার হয় প্রায় দুই লাখ নারী। দীর্ঘদিন ভােগের ফলে অনেক নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। কোনাে কোনাে এলাকায় বারাে তেরাে বছর বয়সী বালিকাদের বিবস্ত্র অবস্থায় রেখে ধর্ষণ করা হতাে, যাতে তারা পালিয়ে যেতে কিংবা আত্মহত্যা করতে না পারে। অনেকে এর মধ্যেই আত্মহত্যা করতাে; | কিছু নারী বেঁচে গেলেও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা তাদের পরিবার কর্তৃক পরিত্যক্ত হলে এসব ধর্ষিতা নারী বুকে পাথর | বেঁধে নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে যা ছিল খুবই মর্মান্তিক। ।। ৫. বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের লাঞ্ছনা : ১৯৭১ সালে ১০ নভেম্বর গভীর রাতে রােকেয়া হলে অবস্থানরত প্রায়।
ত্রিশ জন ছাত্রীর উপর নির্যাতন চালায় পাকবাহিনীর সদস্যরা। পরে তাদের কয়েকজনকে জরুরি চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সিতে নিতে হয়। ৬. নির্যাতিতদের আজকের অবস্থা : মুক্তিযুদ্ধে যে সকল নারী নির্যাতিত হয়েছে তাদের মধ্যে যারা । ইতােমধ্যে মারা গেছে, তারা রক্ষা পেয়েছে। আর যারা বেঁচে আছে তারাতাে প্রতিনিয়ত সমাজে অপমানিত হচ্ছে। এদেরকে সমাজ ও পরিবার আজো মেনে নিতে পারে নি, তাদেরকে হেয় চোখে দেখা হয়। তবে সরকার এসব নির্যাতিত মহিলাদের । পুনর্বাসন ও সাহায্যার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উপসংহার । পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যে গণহত্যা ও নারী নির্যাতন। চালিয়েছে তা ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। পাকবাহিনীর এই নির্মমতা সারা বিশ্ব দেখেছে। মুক্তিযুদ্ধে শুধু যে তারা লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে তা নয়, তারা আমাদের মা-বােনের ইজ্জত নিয়ে ।
জরুরি চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজে
ছিনিমিনি খেলেছে। তবে আমাদের এই অবদান বৃথা যায় নি, পাকবাহিনীর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন গণহত্যার পরও আমরা আমাদের কাঙিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। 32 প্রশ্ন : ৯.১১। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে লিখ। অথবা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও শরণার্থী সম্পর্কে লিখ।। সিরাজগঞ্জ, স, ক, সিরাজগঞ্জ, নি. প.-‘১৪; স, আনন্দমােহন ক. ময়মনসিংহ, নি, প,-‘১৫] । অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও শরণার্থী সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
একারমাইকেল ক, রংপুর, নি. প.-‘১৪] উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নারী-পুরুষ সকলে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। পাক সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বাঙালি বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত সবাইকে। এক কাতারে এনে নির্মমভাবে হত্যা করতে থাকে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববাসী নিন্দাজ্ঞাপন করলেও তারা ক্ষান্ত হয় নি। বরং এদেশের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ পর্যন্ত তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেক নারীকে। নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। পাক সেনাদের এই নির্মমতার হাত থেকে রক্ষা পেতে লক্ষ লক্ষ মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ। ভারত ও মায়ানমারে আশ্রয় নেয়।
মায়ানমারে নানা সমস্যার মধ্যে অবস্থান
এই বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারত ও মায়ানমারে নানা সমস্যার মধ্যে অবস্থান করে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তাদের এদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে, সেই সাথে তারা অপারেশন সার্চলাইট’ নামে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এই অপারেশনের নামে তারা ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অফিস-আদালতে। হামলা চালায়, সেই সাথে ঢাকার রাজপথ থেকে যাকে যেভাবে পেয়েছে, সেভাবেই গুলি করে হত্যা করেছে। একরাতেই পাকবাহিনী। পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কোয়াটার ও ছাত্র হলে হামলা চালায়। একরাতেই তারা। ঢাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। তাদের গণহত্যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো : ১. সাধারণ মানুষকে হত্যা ।
পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা এদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ। মানুষদের হত্যা করে। শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায়। শহরের রিকশাচালক থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী। কাউকে তারা বাদ রাখে নি। ২. বুদ্ধিজীবী হত্যা : পাকসেনারা এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় বুদ্ধিজীবী ও উচ্চপদস্থ পেশাজীবীদের ধরে। নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা এদেশের মূল চালিকাশক্তি ভেঙে দিতে বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করে। তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিকসহ নানা পেশায় নিয়ােজিতদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ” ৩. নারী হত্যা : পাকসেনারা তাদের বিকৃত রুচির কারণে নানা ধরনের অপকর্ম করতাে। তারা ছিল নারীলােলুপ ।
এদেশের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত কাউকে তারা নির্যাতন করতে দ্বিধাবােধ করে নি। কোনাে বাড়ি বা এলাকায়। সুন্দরী কিশোরী বা তরুণী দেখলে তাদের তুলে নিয়ে যেত পাকসেনাদের ক্যাম্পে। সেখানে রেখে তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালানাে হতাে। যৌন নির্যাতনের পর অনেক নারীকে তারা হত্যা করে।
আরো পড়ুন: